মেঘনা আলম যেভাবে ব্ল্যাকমেইল করতেন রাষ্ট্রদূতদের, চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস

গত কয়েকদিন ধরে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কথিত মডেল মেঘনা আলম। বিশেষ ক্ষমতা আইনে তার আটক এবং আদালতে হাজিরা নিয়ে তৈরি হয়েছে তুমুল হইচই। মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান দাবিকারী এই রহস্যময় নারী তার সৌন্দর্য, স্মার্টনেস এবং ইংরেজি দক্ষতাকে ব্যবহার করে উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতেন, যা পরবর্তীতে প্রতারণার হাতিয়ারে পরিণত হয়।

মেঘনা আলমের কার্যক্রম শুধু স্থানীয় পর্যায়ে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তিনি বিদেশি কূটনীতিকদেরও টার্গেট করতেন। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতকে তিনি ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন।

তবে শুধু সৌদি নয়, আরও দু’জন রাষ্ট্রদূত তার প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে একজন ২০২৪ সালের নির্বাচন-পূর্ব আলোচিত রাষ্ট্রদূত এবং অন্যজন একটি সার্কভুক্ত দেশের কূটনীতিক, যিনি বর্তমানে বাংলাদেশেই কর্মরত। ধারণা করা হচ্ছে, মেঘনা এই তিন রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তবে মর্যাদার প্রশ্নে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করেননি।

মেঘনার সহযোগী দেওয়ান সমীর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গোয়েন্দারা আরও জানাচ্ছেন, মেঘনা শুধু একজন প্রতারকই নন, তার একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ থাকারও ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তার মোবাইল ফোন ও পেনড্রাইভ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এই সংযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গত ৯ এপ্রিল রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে মেঘনাকে আটক করা হয়। পরদিন আদালত তাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। একই দিনে তার সহযোগী সমীরকেও গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, মেঘনা একটি সুপরিচালিত প্রতারণার চক্র চালাতেন। তিনি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের নামে বিভিন্ন দূতাবাসের জনসংযোগ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতেন এবং ধীরে ধীরে রাষ্ট্রদূত পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতেন। পরে তিনি তাদেরকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করতেন। অনেক ক্ষেত্রে তিনি ভুক্তভোগীদের ফটোশপ করা ছবি দেখিয়ে ডিজিটাল হয়রানির হুমকি দিতেন।

এখন পর্যন্ত মেঘনার ঘটনায় ২০ জনের বেশি ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এই তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই উন্মোচিত হচ্ছে একটি জটিল অপরাধ জগতের নানা দিক। শেষ পর্যন্ত এই রহস্যময় নারীর ভাগ্যে কী, সেটিই এখন দেখার বিষয়। তবে এই ঘটনা উচ্চপর্যায়ের প্রতারণা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

সূত্র:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *