লাইভে এসে আত্ম’হত্যা করলেন প্রবাসী হিরো আলম

ধারদেনা ও সহায়-সম্পদ বিক্রি করে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে স্থানীয় আদম ব্যবসায়ীর হাত ধরে এক বছর আগে সৌদি আরব যান মো. রাজিব মিয়া ওরফে হিরো আলম (৩২)। তিনি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সিংরুইল ইউনিয়নের মহাবৈ ছাবালিচর গ্রামের বাসিন্দা।

আদম ব্যবসায়ীর কথামতো সেখানে গিয়ে কাজ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। দেনাদারের তাগাদা পেয়ে দেশে ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে আজ সোমবার সকালে পরিবারের সঙ্গে কথা বলার শেষে আত্মহত্যা করেছেন।

খবর পেয়ে আজ সোমবার বিকেলে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িজুড়ে চলছে মাতম। চিৎকার করে কান্না করছেন বৃদ্ধা মা আনোয়ারা বেগম (৮০)। বলছেন, ‘আমার বাজানরে মাইর‌্যালছে আজিজুইল্যা। হেরে তোমরা ধরো।

আমি অহন কারে লইয়া বাচবাম।’
এ সময় হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। আজিজুল কে—জানতে চাইলে পরিবারের লোকজন জানায়, পাশের হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের উত্তর গোবিন্দপুর গ্রামের মো. আবেদ আলীর ছেলে। তার মাধ্যমে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে গত প্রায় এক বছর আগে সৌদি আরবের দাম্মাম যান।

কথা ছিল একটি ফ্যাক্টরিতে ৪০ হাজার টাকা বেতন পাবেন। কিন্তু যাওয়ার পর আকামা না থাকায় কাজ না পেয়ে পালিয়ে ছিলেন। এ অবস্থায় ভাইয়ের সাহায্যে কিছু একটা করলেও মাসান্তে নিজের খরচের ব্যয় মেটেনি। এ অবস্থায় দেশের ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে পাওনাদাররা স্ত্রী চাঁদনি বেগমের কাছে তাগাদা দেয়। স্ত্রী ও পরিবারের লোকজন টাকা পরিশোধ করতে না পেরে পাওনাদারের তোপের মুখে বেকায়দায় পড়েছিলেন।

এ অবস্থায় স্ত্রী চাঁদনি বেগম সৌদিতে স্বামী হিরো আলমের সঙ্গে ফোনে প্রায় প্রতিদিনই কথা বলতেন। কিন্তু হিরো আলম টাকা দিতে অক্ষমতা প্রকাশ করে সাফ জানিয়ে দিতেন। এক পর্যায়ে বাড়িতে যোগাযোগ বন্ধ ছিল।

হিরো আলমের ভাবি নিপা আক্তার জানান, গতকাল সোমবার সকাল ১১টার দিকে হিরো আলম লাইভে এসে ফোন দেন তার মোবাইল নম্বরে। এ সময় স্ত্রী চাঁদনির সঙ্গে ২ মিনিট কথা বলার পর দুজনের মধ্যে টাকা পাঠানো নিয়ে তর্ক হয়।

এক পর্যায়ে ফোনটি তাকে (ভাবি) দিতে বলেন। তখন হিরো আলম জানান, তার পক্ষে দেশে টাকা পাঠানো সম্ভব হবে না। নিজেই খেয়ে না খেয়ে জীবন পার করছেন। এ সময় তার মা ও দুই সন্তানকে দেখে রাখার জন্য অনুরোধ করেন। এ সময় বড় মেয়ে আশা মনি (১২) ও ছোট মেয়ে হাবিবা আক্তারকে (৭) ফোনটি দিতে বলেন। ছোট মেয়ে হাবিবার সঙ্গে কথা বলতে বলতে একটি গাছে ফাঁসিতে ঝুলে যান। পরে মোবাইলটির স্ক্রিন অন্ধকার হয়ে যায়।

জানতে চাইলে নিহত হিরো আলমের ছোট মেয়ে হাবিবা বলে, তাকে ফোন করে বাবা জানায় ভালো করে পড়ালেখা করতে। আর তার জন্য দোয়া করতে। এই বলেই ফাঁসিতে ঝোলেন। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর সৌদি আরবে অবস্থান করা বড় ভাই আরিফুল ইসলাম ফোন করে ভাই হিরো আলম ফাঁসিতে ঝুলে মারা যাওয়ার বিষয় নিশ্চিত করেন।

এলাকার লোকজন জানায়, হিরো আলম খুবই ভালো ছেলে ছিলেন। সংসারের ব্যয় মেটাতে পেরে একটা স্বপ্ন নিয়ে সৌদি আরব গিয়েছিল। কিন্তু আদম ব্যবসায়ীর কথার ফাঁদে পড়ে এখন সবই শেষ হলো। এ ঘটনার জন্য আদম ব্যবসায় আজিজুলের বিচার চান।

এ বিষয়ে আজিজুল মোবাইলে বলেন, ‘পাঠানোর তিন মাস পর আমার কোনো দায়িত্ব থাকে না। এই বলে ফোনটি কেটে দেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *