বাথরুমে উ’লঙ্গ হয়ে গোসল করা কি জায়েজ, ইসলাম যা বলছে

মানুষের দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো পবিত্রতা রক্ষা ও শরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। ইসলাম ধর্মে পবিত্রতার গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহ তাআলা বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্রতা রক্ষা করতে ভালোবাসেন।” (সুরা তাওবা: ১০৮)

তবে পবিত্রতা অর্জনের প্রক্রিয়ার সঙ্গেও ইসলাম গভীরভাবে নীতিমালা নির্ধারণ করেছে। যেমন, গোসল বা বাথরুমে থাকা অবস্থায় কেমন আচরণ করতে হবে, শরীর কতটুকু ঢেকে রাখতে হবে, এসব বিষয়ে হাদীস ও সাহাবিদের আমলে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে বাথরুমে একা থাকলে উলঙ্গ হয়ে গোসল করা যাবে কি? নাকি এটি গুনাহ? চলুন কুরআন-হাদীসের আলোকে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে জেনে নিই।

শরীর ঢাকার নির্দেশনা (সতরের হুকুম)

ইসলামে সতর (গোপন অঙ্গ বা শরীরের ঢাকার অংশ) ঢেকে রাখা ফরজ বা বাধ্যতামূলক। নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই ভিন্ন ভিন্ন সতরের পরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে।

পুরুষের জন্য সতর: নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশ।

নারীর জন্য সতর:

গোটা শরীর, শুধু মুখ ও হাত ছাড়া (নামাজ বা পরদার ক্ষেত্রে)।

গৃহস্থালি কাজে বা নারীদের মাঝে সতরের হালকা নিয়ম রয়েছে, তবে অপ্রয়োজনে উলঙ্গ হওয়া অনুমোদিত নয়।

একা থাকলেও উলঙ্গ হওয়া কি জায়েয?

এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। অনেকেই বলেন, “আমি তো একা বাথরুমে আছি, উলঙ্গ হলে দোষ কোথায়?” ইসলামের দৃষ্টিতে একা হলেও অপ্রয়োজনে সম্পূর্ণ উলঙ্গ হওয়া মাকরূহ (নিন্দনীয়) এবং কিছু ক্ষেত্রে হারাম-এর কাছাকাছি।

হাদীস থেকে প্রমাণ:

হযরত বাহজ ইবনে হাকিম (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা ও দাদা থেকে বর্ণনা করেন:

“হে রাসূলুল্লাহ! যখন আমরা একা থাকি, তখন কি আমাদের সতর ঢেকে রাখতে হবে?”

তিনি বললেন:

“আল্লাহ তাআলা তোমার থেকে অন্যদের চাইতে বেশি লজ্জাশীল।”

(তিরমিযি: ২৭৯৪, হাদীস সহীহ)

এ হাদীস থেকে বোঝা যায়, একা থাকলেও শরীরের গোপন অংশ ঢেকে রাখা উত্তম এবং লজ্জাশীলতার পরিচয়। কারণ, আল্লাহ আমাদের দেখছেন সবসময়।

বাথরুমে গোসলের সময় শরীর সম্পূর্ণ উলঙ্গ করা সম্পর্কে সাহাবিদের আমল

উলঙ্গ হলে কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে?

আত্মিক ক্ষতি:

আল্লাহর প্রতি লজ্জাশীলতা হ্রাস পায়।

গুনাহের প্রতি উদাসীনতা জন্মাতে পারে।

মানসিক প্রভাব:

একাকীত্বে কু-চিন্তা প্রবণতা বাড়তে পারে।

ইচ্ছা-অনিচ্ছায় শয়তান প্রবেশের সুযোগ পায়।

ফেরেশতারা কষ্ট পায়: ফেরেশতারা পবিত্র, তারা নোংরা, গন্ধযুক্ত বা অশ্লীল জায়গায় উপস্থিত থাকেন না। অশালীনতা দেখলে তারা চলে যান।

ইসলামে আদর্শ গোসলের পদ্ধতি

ইসলামে শুধু শারীরিক নয়, আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধতাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই গোসলের সময় কিছু সুন্নাত অনুসরণ করা উত্তম।

সুন্নাত মোতাবেক গোসলের ধাপ:

১. গোসলের নিয়ত করা

২. “বিসমিল্লাহ” বলা (গোপনে)

৩. হাত ধোয়া, গোপনাঙ্গ পরিষ্কার

৪. অজুর মতো করে হাত-পা-মুখ ধোয়া

৫. মাথা তিনবার ধোয়া

৬. ডান পাশে পানি ঢালা, পরে বাম পাশে

৭. পুরো শরীর পরিষ্কার করে নেয়া

ইসলামে পর্দা ও লজ্জাশীলতার মর্যাদা

কুরআনুল কারিমে এসেছে:

“হে আদম সন্তান! আমি তোমাদের জন্য পোশাক দান করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আড়াল করে এবং সৌন্দর্য হিসেবে কাজ করে।”

(সুরা আরাফ: ২৬)

রাসূল (সা.) বলেছেন:

“যে ব্যক্তি লজ্জাশীলতা বজায় রাখে, সে ঈমানদার।”

(সহীহ বুখারী, হাদীস: ৬১১০)

যেসব ভুল অনেকেই করে

উলঙ্গ হয়ে গোসল করে ভিডিও বা ছবি তোলে এটি মহা গুনাহ

বাথরুমে গান বাজানো বা কথা বলা

অযথা সময়ক্ষেপণ

অন্যের সামনে গোসল করা

বাচ্চাদের সামনে উলঙ্গ হওয়া

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান, যা মানুষের জীবনযাপনের প্রতিটি দিক সুন্দরভাবে শিখিয়ে দেয়। ব্যক্তিগত সময়, এমনকি একাকীত্বেও কেমন আচরণ করতে হবে, তাও ইসলাম শিক্ষা দেয়। উলঙ্গ হয়ে গোসল করায় শরীর পরিষ্কার হয়তো হয়, তবে অন্তরের পরিশুদ্ধতা অর্জনের জন্য ইসলাম লজ্জাশীলতা ও শালীনতা বজায় রাখার নির্দেশ দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *