বাংলাদেশে ২০০ টাকায় স্টারলিংক ইন্টারনেট ব্যবহার—বাস্তবতা কতটা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে এক বিস্ময়কর দাবি—মাত্র ২০০ টাকায় এখন বাংলাদেশে স্টারলিংক ইন্টারনেট ব্যবহার করা সম্ভব। এমনকি বলা হচ্ছে, এভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন রিকশাওয়ালারাও। বিষয়টি নিয়ে অনেকে বিস্মিত হলেও কেউ কেউ আবার একে গুজব বা বিভ্রান্তিকর তথ্য বলেই মনে করছেন। তবে বাস্তবতা হলো, এই দাবির পিছনে রয়েছে কিছু প্রযুক্তিভিত্তিক যুক্তি এবং সীমাবদ্ধতা, যা জানা দরকার।

বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য স্টারলিংকের ‘রেসিডেনশিয়াল’ প্যাকেজ চালু রয়েছে। এই প্যাকেজে ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করতে গ্রাহককে এককালীন প্রায় ৪৭ হাজার টাকা দিয়ে রাউটার ও প্রয়োজনীয় সংযোগ কিট কিনতে হয়। এরপর মাসে প্রায় ৪,২০০ টাকা সাবস্ক্রিপশন ফি দিতে হয়। সাধারণভাবে মনে হতে পারে, এটি কেবলমাত্র উচ্চবিত্ত বা প্রতিষ্ঠানের জন্যই উপযোগী। কিন্তু এখানেই নতুন ভাবনার সূত্রপাত।

স্টারলিংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অনুযায়ী, একটি রাউটার থেকে সর্বোচ্চ ২৩৫টি ডিভাইস সংযুক্ত করা সম্ভব এবং কভারেজ এরিয়া প্রায় ৩২০০ স্কয়ার ফিট পর্যন্ত বিস্তৃত। এই তথ্যকে ভিত্তি করেই কিছু প্রযুক্তিপ্রেমী তরুণ দাবি করছেন, যদি কোনো বাজার বা এলাকায় ২০ থেকে ২৫টি দোকান একসঙ্গে অংশীদার হয়ে এককালীন খরচ করে স্টারলিংক ডিভাইস কিনে নেয়, তবে ইন্টারনেট খরচ তাদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে প্রত্যেক দোকানের খরচ দাঁড়াবে মাসে প্রায় ২০০ টাকা করে। অর্থাৎ স্বল্প আয়ের পেশাজীবীরাও এই ইন্টারনেট সেবা পেতে পারেন।

তবে এই ধারণা বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। একদিকে, যত বেশি ডিভাইস সংযুক্ত হবে, তত বেশি ইন্টারনেট স্পিড কমে যাবে। অন্যদিকে, দোকান বা কক্ষে দেয়াল থাকলে রাউটারের সিগন্যাল সমানভাবে পৌঁছায় না। ফলে সবাই একই মানের সেবা পাবে—এমনটা নিশ্চিত নয়। তাছাড়া, স্টারলিংকের এই প্যাকেজ মূলত আবাসিক ব্যবহারকারীদের জন্য ডিজাইন করা, যেখানে তিন-চারটি রুম ও ১০-১৫টি ডিভাইসে ভারী কাজ ছাড়া ভালো স্পিড পাওয়া যায়।

যদিও স্টারলিংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ব্যবহার শুরু করার পর প্রথম ৩০ দিনের মধ্যে যদি কেউ সন্তুষ্ট না হন, তবে সম্পূর্ণ টাকা ফেরত পাবেন। এটি অনেকের জন্য একটি আশার আলো হতে পারে। ফলে চাইলে কেউ পরীক্ষামূলকভাবে এমন উদ্যোগ নিতে পারেন। তবে এর আগে প্রযুক্তিগত দিক ও ব্যবহারকারীর সংখ্যা মাথায় রেখে বাস্তবতা বিশ্লেষণ করা জরুরি।

সব মিলিয়ে বলা যায়, ২০০ টাকায় স্টারলিংক ইন্টারনেট ব্যবহারের ধারণা সম্পূর্ণ গুজব নয়, তবে বাস্তবায়ন বেশ জটিল। এটি প্রযুক্তিনির্ভর সমন্বয়ের মাধ্যমে কিছু ক্ষেত্রে সম্ভব হলেও সকলের জন্য উপযোগী নয়। তাই বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত আশাবাদ না হয়ে, বাস্তবতা বুঝেই পদক্ষেপ নেওয়া শ্রেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *