অধিকাংশ মানুষের নখের গোড়ায় সাদা অর্ধ চাঁদ আকৃতির অংশ দেখা যায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে একে বলা হয় ‘লুনুলা’। অনেকের বড় আঙুলে এটি স্পষ্ট থাকে, আবার কারও ক্ষেত্রে একেবারেই দেখা যায় না। অনেকেই মনে করেন, লুনুলার উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি হৃদ্রোগ বা কিডনির সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, এ ধারণা পুরোপুরি সঠিক নয়, যদিও এর সঙ্গে শরীরের কিছু পরিবর্তনের সম্পর্ক থাকতে পারে।
কী এই লুনুলা
বিশেষজ্ঞদের মতে, নখের নিচের সাদা অংশটি আসলে নখের ‘ম্যাট্রিকস’ বা উৎপত্তিস্থল। এখান থেকেই নতুন নখ গজায়। এর নিচের রক্তনালির স্তর কিছুটা ঘন হওয়ায় এটি সাদা দেখায়। তবে লুনুলার আকার, রং বা দৃশ্যমানতার পরিবর্তন অনেক সময় শরীরের অভ্যন্তরীণ অসামঞ্জস্যের ইঙ্গিত দিতে পারে।
লুনুলা না থাকলে কী হয়
যদি নখের গোড়ায় এই অর্ধ চাঁদ একেবারেই না দেখা যায়, তবে তা শরীরে আয়রন ঘাটতি, রক্তাল্পতা বা কিডনির সমস্যা নির্দেশ করতে পারে। কখনো কখনো প্রোটিন ও ভিটামিনের ঘাটতির কারণেও এমনটি হতে পারে।
রং পরিবর্তনের অর্থ
চিকিৎসকরা বলছেন, লুনুলার রং পরিবর্তিত হলে তা গুরুত্ব সহকারে দেখা দরকার—
লালচে লুনুলা: হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা
নীলচে লুনুলা: শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি বা ডায়াবেটিসের ইঙ্গিত
বাদামি বা ধূসর লুনুলা: কিডনির দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা বা শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমা
নখে দাগ বা রেখা দেখা দিলেও তা অবহেলা করা উচিত নয়, কারণ এটি শরীরের ভেতরের কোনো ঘাটতির সংকেত হতে পারে।
‘হাফ-অ্যান্ড-হাফ নখ’
কখনো নখের নিচের অর্ধেকটা সাদা ও ওপরের অংশ বাদামি বা লালচে দেখা যায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে একে বলা হয় ‘হাফ-অ্যান্ড-হাফ নখ’, যা সাধারণত কিডনি রোগে আক্রান্তদের মধ্যে দেখা যায়।
সতর্কতা ও পরামর্শ
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু লুনুলার রং বা আকার দেখে কোনো রোগ নির্ণয় করা যায় না। এটি শরীরের ভেতরের পরিবর্তনের একটি সম্ভাব্য সংকেত মাত্র। যদি ক্লান্তি, চোখ বা পায়ের ফোলা, বুক ধড়ফড় বা রক্তচাপের অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
চিকিৎসকদের পরামর্শ, সুষম খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিত জীবনযাপন বজায় রাখলে নখসহ শরীরের সার্বিক সুস্থতা রক্ষা করা সম্ভব।



