বছরের প্রথম কালবৈশাখী ঝড়ে কুড়িগ্রামের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উড়ে গেছে ঘরের টিনের চাল, গাছপালা ও বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে এবং শিলার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বোরো ধানের আবাদ ও আম। শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত ১১টার দিক থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঝড় শুরু হয়। এ ঝড় চলে অনেক রাত পর্যন্ত। মাঝরাতে ঝড়ের সঙ্গে শুরু হয় শিলা বৃষ্টি। ঝড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ও তার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রোববার সারাদিন জেলা শহরসহ বেশ কিছু এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষাণাগার জানিয়েছে, শনিবারের রাতের বৈশাখী ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২ থেকে ৩২ কিলোমিটার। শনিবার রাতের ঝড়ে কুড়িগ্রাম সদর ও ফুলবাড়ী উপজেলায় কয়েকটি স্থানে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা সদরের বেলগাছা ও হলোখানা ইউনিয়নে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ পরিবারের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্তত ৮ থেকে ১০টি পরিবারের বাড়িঘর ভেঙে মাটিতে পড়ে গেছে। হলোখানা ইউনিয়নের চর হলোখানা এমদাদিয়া আলিম মাদরাসা ও হলোখানা নুরনবী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে।
বেলগাছা ইউনিয়নের পশ্চিম পলাশবাড়ী এলাকার রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পরিবারের আট সদস্য নিয়ে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন। ঘর মেরামত করার সাধ্য নেই আমার। দিশাহারা হয়ে গেছি।
হলোখানা ইউনিয়নের আজিজুল হক জানান, তিনি ঢাকায় জুতার কারখানায় কাজ করেন। ছয় মাস আগে অনেক কষ্টে বাড়িটি করেছেন তিনি। সাত দিন আগে বাসায় উঠেছেন পরিবার নিয়ে। তার স্ত্রী, তিন সন্তান বাড়িতে থাকেন। শনিবারের রাতের ঝড়ে বাড়ির পাশে সড়কের বিশাল আকৃতির রেন্ট্রি কিড়াই গাছ ভেঙে পরে ঘরের উপর ভেঙে পড়লে ঘরের একাংশ ও রান্না ঘর ভেঙে পরে। ওই এলাকার আজিজুল হক জানান, এখনও বাড়ির করার ঋণের টাকা শোধ হয় নাই। এরমধ্যে ঝড়ে সব শেষ হয়ে গেল।
ফুলবাড়ীর উপজেলার বড়ভিটা বাজারের ১৪ দোকান-পাট লণ্ডভণ্ড হয়েছে এ ঝড়ে। এ সময় পথচারী আব্দুস সোবহান ও রতন মিয়া নামের দুজন সামান্য আহত হয়েছেন। শনিবার রাত ১১টার দিকে আকস্মিকভাবে এ ঝড় বয়ে যায়।
বড়ভিটা বাজারে দেখা গেছে, দোকানের উপর বিশাল আকৃতির গাছ পড়ে ১৪টি দোকান ঘর মাটিতে পড়ে গেছে। টিন দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা গাছটি সরানোর চেষ্টা করছেন।
ব্যবসায়ী আইয়ুব আলী, হাফেজ আলী, জমসেদ আলী ও এমদাদুল হক জানান, ৫০ বছরের বিশাল আকৃতির বট গাছটি পড়ে তাদের দোকান লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। অনেকের দোকানের ভেতরের টিভি ও ফ্রিজ নষ্ট হয়ে গেছে। সব দোকান মিলে অন্তত ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান তারা।
বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জান্নাতি খাতুন জানান, আকস্মিক ঝড়ে বাজারের ১৪টি দোকান বিধ্বস্ত হয়েছে। দুটি দোকান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা করে ইউএনও স্যারের কাছে পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রেহেনুমা তারান্নুম জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ আসলে তাদের মাঝে বিতরণ করা হবে।
ঝড় হওয়া এলাকাগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তীব্র ঝড়োবাতাস ও শিলাবৃষ্টিতে বোরো ধান, সবজি ও আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারণে সদর ও ফুলবাড়ী উপজেলায় বেশ ক্ষয়ক্ষতির খবর পেয়েছেন তারা।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বলেন, প্রাথমিকভাবে ২১৮ হেক্টর বোরো ধান, ৯২ হেক্টর ভুট্টা, ৫১ হেক্টর সবজি এবং ১৬ হেক্টর পাট খেতের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পাওয়া গেছে। এই ক্ষয়ক্ষতি সদর ও ফুলবাড়ী উপজেলায় বেশি।’
কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) উত্তম কুমার রায় বলেন, ‘ঝড়ে উপড়ে পড়া গাছপালা অপসারণে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো রোববার সকাল থেকে কাজ করছে। সড়ক যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার জন্য আমরা রাত থেকেই নির্দেশনা দিয়েছি। এছাড়াও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখাকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় সহায়তার ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।’